ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখার আদেশ লঙ্ঘন

মালুমঘাটে সরকারি জমিতে নিজস্ব মার্কেট নির্মাণ করে বাহাদুর মিয়ার জমিদারী

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মো.জোবায়ের হাবিব স্বাক্ষরিত অফিস আদেশ লঙ্ঘন করে চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট বাজারের সরকারি জমিতে অবৈধ দোকান নির্মাণের অভিযোগ ইজারাদারের বিরুদ্ধে। তিনমাস আগে জেলা প্রশাসন থেকে এইধরণের নির্দেশনা জারির পর চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান অভিযুক্ত বাজার ইজারাদার বাহাদুর মিয়াকে বাজারের জমিতে ব্যক্তিগত দোকানপাট নির্মাণ না করতে নির্দেশ দেন।
স্থানীয় সুত্রে অভিযোগ উঠেছে, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনার পর অভিযুক্ত বাজার ইজারাদার বিএনপি নেতা বাহাদুর মিয়া বাজারের জায়গায় অবৈধ দোকানপাট নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখলেও সম্প্রতিসময়ে একই স্পটে দোকানপাট নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে দোকানের চালার উপর টিন লাগানোর কাজ করছেন। এতে বাজারের সরকারি জায়গা ক্রমান্নয়ে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে দোকানপাট নির্মাণের মাধ্যমে ওই জায়গার অঘোষিত মালিক বনে যাচ্ছেন বাজার ইজারাদার বাহাদুর মিয়া।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ১৪২৮ বাংলা সনে চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট বাজারটি সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে ইজারা পেয়েছিলেন মোহাম্মদ সেলিম। তিনি স্থানীয় ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট ডুমখালী গ্রামের নুরুল আজমের ছেলে। সেইবার সেলিম আয়কর ভ্যাটছাড়া ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বাজারটি ইজারা নিলেও পুরোবছর একদিকে করোনা সংক্রমণের কারণে বাজার না বসার কারণে কাঙ্খিত পরিমাণ টোল আদায় করতে পারেনি।
অন্যদিকে শুধুমাত্র বাজারের নির্ধারিত স্থান থেকে কিছু পরিমাণ টোল আদায় করতে পারলেও বাজারের হাসঁ-মুরগী, মাছ বাজার এবং খালী জায়গা জোরপুর্বক দখলে নিয়ে অবৈধ দোকান নির্মাণ করা কতিপয় দখলবাজদের কবল থেকে সিংহভাগ টোল আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ কারণে ইজারাদার সেলিম ১৪২৮ সনে বিপুল টাকার লোকসান দিয়েছেন। যদিও তিনি ওইবছর সরকারি ঘোষনা মোতাবেক সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে সমুদয় রাজস্ব উপজেলা প্রশাসনের কোষাগারে জমা দিয়েছেন। এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে ইজারাদার সেলিম অভিযুক্ত দখলবাজদের কবল থেকে বকেয়া টাকা টোল আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাজারটি ১৪২৯ বাংলা সনের জন্য ইজারা না দিতে প্রশাসনের কাছে বারবার লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী বাজার ইজারাদার মোহাম্মদ সেলিম অভিযোগ তুলেছেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও গত ফেব্র“য়ারী মাসে উপজেলা প্রশাসন উপজেলার সকল হাট বাজার ইজারা নিলামের আওতায় ১৪২৯ বাংলা সনের জন্য মালুমঘাট বাজারটি ইজারা দিতে দরপত্র আহবান করেন।
তিনি বলেন, আগের বছর বাজারটি ইজারা নিয়ে নিজের বিপুল টাকার লোকসান হলেও ১৪২৯ সনে তিনি বাজারটি পুনরায় ইজারা পাবেন এই আশা থেকে দরপত্রে অংশনেন। যদিও সেখানে সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে ডুমখালী গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে বাহাদুর মিয়া নতুন বছরের জন্য মালুমঘাট বাজারটি ইজারা পেয়েছেন।
সেলিমের অভিযোগ, অভিযুক্ত বাহাদুর মিয়া মুলত মালুমঘাট বাজারের সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে নির্মাণ করা অবৈধ দোকান তথা মার্কেটের মালিকানা পাকাপোক্ত করার জন্য এবছর বাজারটি সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে আর্ভিভুত হয়ে ইজারা নিয়েছেন। সাধারণ ব্যবসায়ীদের জিন্মি করে অতিরিক্ত টোল আদায়ের পাশাপাশি অভিযুক্ত বাহাদুর বাজারের সরকারি বিপুল জায়গা নতুন করে দখলে নিয়ে বর্তমানে দিনরাত কাজ চালিয়ে অবৈধ দোকান নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ সেলিম বাজারের সরকারি জায়গা দখলে অবৈধ দোকান নির্মাণে আইনের বাধ্যবাধতা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশিত গেজেটমুলে ২০১৮ সালের হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) বিধিমালা এর খচড়া আদেশের ১৯(১) নং অধ্যাদেশে উল্লেখ্য আছে, হাট বাজারের সরকারি খাসজমি কেউ অবৈধভাবে দখলে রাখিলে বা এই আইনের বর্ণিত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে হাট বাজারের খাসজমির উপর কোন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করলে বা নির্মাণের উদ্যোগ নিলে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনাধিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা অনধিক একবছর বিনাশ্রম কারাদন্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ সেলিম দাবি করেন, সরকারি বাজারের জায়গা দখলে নিয়ে আগে মার্কেট নির্মাণ এবং বর্তমানে নতুনভাবে জায়গা দখলে নিয়ে অবৈধ দোকান নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখলেও প্রশাসন বিষয়টির আলোকে অভিযুক্ত বাহাদুর মিয়া এবং তাঁর সহযোগিদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। এই অবস্থার কারণে মালুমঘাট বাজারের সরকারি জায়গা দিনদিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে। তাতে সরকারের বিশাল অঙ্কের ক্ষতিসাধন হচ্ছে।
স্থানীয় এলাকাবাসি জানিয়েছেন, গতমাসে পাহাড়কাটার অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক অভিযুক্ত বাহাদুর মিয়াকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছে। ওইসময় পাহাড় কাটার অবৈধ কাজে বাঁধা দিতে গেলে অভিযুক্ত বাহাদুর মিয়া চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের ভুমি তহসিলদার (চিরিঙ্গা ইউনিয়ন ভুমি অফিস) সেলিম মিয়াকে শাররীকভাবে লাঞ্চিত করার দৃষ্টাতাও দেখিয়েছে।
জানতে চাইলে সরকারি হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, সরকারি বাজারের জায়গায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ স্থাপনা নির্মাণ করতে পারেনা। মালুমঘাট বাজারের ব্যাপারটি নিয়ে ইতোপুর্বে ইজারদারকে বারণ করা হয়েছে। তবে নতুন করে যদি মালুমঘাট বাজার ইজারাদার সেই কাজটি করে থাকেন, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ##

পাঠকের মতামত: